কুড়িগ্রাম শহরের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সামনে সামনে পড়ে থাকা ঠিকানাহীন বৃদ্ধার আপাতত ঠাঁই মিলেছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায়। পরিচয়হীন হয়ে টানা তিন দিন ব্যাংকটির সামনে পড়ে থেকে শুধু ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে ডাক ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। তার পড়ে থাকার খবর পেয়ে গত রবিবার রাতেই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালকের উদ্যোগে তাকে উদ্ধার করেন সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মীরা। ওই রাতেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। এরপর তার চিকিৎসাসেবা শুরু হয়।
এর আগে টানা তিন দিন ওই স্থানে পড়েছিলেন এই বৃদ্ধা। দিনভর রোদ আর গরমে সেদ্ধ হওয়ার অবস্থা। ডাকলে মুখে শুধু প্রলাপের মতো একটাই শব্দ ‘বাবা’। আর কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। শুক্রবার রাতে ওই স্থানে কেউ তাকে ফেলে চলে যান। এরপর থেকে সেখানেই পড়েছিলেন তিনি। স্থানীয় আর্টিস্ট কৈনুল বৃদ্ধার এই অবস্থা দেখে তার জন্য বস্তা বিছিয়ে বিছানা তৈরি ও গায়ে কম্বল দেওয়ার ব্যবস্থা করে তাকে স্যালাইন ও খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তবে পানিও ঠিকমতো পান করতে পারছিলেন না বৃদ্ধা।
স্থানীয়দের ধারণা, হয়তো তার পরিবারের কোনও সদস্য কিংবা নিজ সন্তান তাকে বোঝা ভেবে এভাবে সড়কে ফেলে গেছে। এসময় তার চিকিৎসা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা।
খবর পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো.রোকোনুল ইসলাম তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তার অফিসের কর্মীদের পাঠান। এরপর সোমবার তিনি নিজে হাসপাতালে এসে বৃদ্ধাকে দেখেন এবং তার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।
তবে হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। কারণ, এই বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছে হাসপাতালের ৫ নং ওয়ার্ডের বারান্দায়। ফলে বাইরে বাতাসে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাকে ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা দেওয়া জরুরি।
এদিকে, ভর্তির পর রবিবার রাত থেকে তার চিকিৎসা শুরু হলেও তার স্বাস্থ্যেরও তেমন কোনও উন্নতি হয়নি বলে জানান সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধা ‘বাবা’ ছাড়া কোনও কথা বলতে পারছেন না। তাকে কোনও কিছু খাওয়ানোও সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা আরও জানান, ওই নারী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাকে দুটি স্যালাইন দিলেও তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তারপরও কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে অজ্ঞাত ওই নারীর সোমবার রাত পর্যন্ত কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি, কেউ তার খোজঁও নিতে আসেননি।
পাঠকের মতামত: